Thursday, May 7, 2015

ম্যামাল

আনুশা তখন নতুন স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। ওর স্কুলের গালভরা নাম। হারমনি স্কুল অফ সায়েন্স। সকালে লাল রঙের স্কুল ড্রেস পরে স্কুলে যায়। এই স্কুলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনেক কিছু শেখানো হয় - একদম নিচু ক্লাস থেকেই।

একদিন স্কুল থেকে এসে আমাকে সন্দেহের সুরে জিজ্ঞেস করল - আব্বু আর ইউ অ্যা ম্যামাল?

কারণ জিজ্ঞেস করলে সে জানালো - স্কুলে সে শিখেছে ম্যামালরা দুধ খায়। বাসার ফ্রিজ ভর্তি দুধ থাকা স্বত্ত্বেও আমি এক ফোঁটা দুই খাই না।

স্কুলের প্রজেক্টের জন্য আনুশা তার আশেপাশের ম্যামাল প্রাণীদের তালিকা তৈরি করা শুরু করল। খুব সঙ্গত কারণে আমি প্রথমেই সেই তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেলাম। চল্লিশ বছর ম্যামাল হিসাবে কাটিয়ে আমার ম্যামালত্ব হুমকির সামনে পড়ে গেল। ড্রাইভার'স লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেলে যে রকম লাগতে পারে আমার ঠিক সেই অনুভূতি হতে লাগলো।

ম্যামালের তালিকাতে প্রথম স্থান পেল সামারা। জন্ম থেকে সামারা দুধের ভক্ত। সামারার কল্যাণে আমাদের পাড়া প্রতিবেশি, ওর ডাক্তার থেকে শুরু করে সবাই জেনে গেলে দুধের বাংলা নাম হচ্ছে "ডুডু"...সামারা আনন্দের সময় ডুডু খায়, দুঃখ পেলেও ডুডু, ডাক্তার টিকা দেওয়ার পরে ওর আতর্নাদ শুনে বিপন্নবোধ করেন এবং চার্টের দিকে তাকিয়ে আমাদের বলেন - গিভ হার ডুডু নাউ। হঠাৎ অবেলাতে ডুডু শেষ হয়ে গেলে বাসা থেকে জরুরী ফোন পাই,  সেই ফোনালাপের ব্যাকগ্রাউন্ডে সামারার ফোঁপানির মধ্যে মধ্যে "দুদু" শব্দটা স্পষ্ট শোনা যায়। সামারার চেয়ে প্রকৃত কোন ম্যামাল আমার চোখেও পড়েনি।

আনুশা বড় হয়ে গেছে। ম্যামাল রহস্য উদাঘটন করে ফেলছে। সেই সঙ্গে দুধ খেতেও আগ্রহ বোধ করে না। বড় হয়ে গেলে মনে হয় কেউ আর ম্যামাল হতে চায় না। অথচ আমি প্রায়ই ওদের ম্যামাল যুগের কথা স্মরণ করি।

আম্যাদের সেই ম্যামাল আমলের ছবি...