প্রচণ্ড শীত চলে গেছে। এরপরে দুই তিন গরম পড়ল। তীব্র গরম না, কিন্তু অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়ার মতো গরম – ছায়াতে গেলে সামান্য শীত আর রোদে গরম এই রকম অবস্থা। আজ সকাল থেকে গরম উধাও, হালকা শীত আর টিপটিপ বৃষ্টি। বর্ষাকালের বৃষ্টি না, শীতকালের মন খারাপ করা বৃষ্টি। চারিদিক একটু ঘোলা ঘোলা। অন্য কারো কথা জানি না, আমার উপর আবহাওয়ার প্রভাব সাংঘাতিক।
আমি ঝলমলে রোদ ভালোবাসি। সেকেন্ড পছন্দ ঝমঝম বৃষ্টি। সবচেয়ে অপছন্দ শীতের এই টিপটিপ বৃষ্টি। সুতরাং আজকের দিনটা আমার জন্য এমনিতেই খারাপ যাওয়ার কথা। এই রকম দিন কাটানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে কাজের পাশাপাশি অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকা। কাজেও সামান্য ঝামেলা লেগে ছিল। নেটে ঘোরাঘুরি করে খবরে পড়লাম ঢাকাতে জেলবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়েছে। আমিও যদিও বাংলাদেশের খবরে নির্বিকার থাকার চেষ্টা করি, এই খবরে সেটা পারলাম না। মুশতাক আহমেদ এর সাথে আরেক কার্টুনিস্ট বন্দি হয়েছিলেন। পুরনো পত্রিকা খুঁজে সেটার কারণ বের করলাম। ডেইলি স্টার বলছে...
"কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। মুশতাক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেছিলেন।"
'আমি কিশোর' ফেসবুক একাউন্টে গেলে কার্টুনগুলো এখনও দেখা যাবে। আমি লেখালেখি অনেক কমিয়ে দিয়েছি। বড় কোন প্ল্যাটফর্মে আর লেখি না। কোথায় কার অনুভূতিতে আঘাত লাগবে কে জানে!! অসির চেয়ে মসীর শক্তি বেশি। রাষ্ট্রের কাছে তাই গোলাবারুদের চেয়ে বেশি ভয়ংকর জিনিস পেন্সিলে আঁকা কার্টুন, মসীর চেয়েও গুরুতর ব্যাপার হচ্ছে ফেসবুক শেয়ার।
মুশতাক আহমেদকে আমি চিনতাম না, যদিও চেহারাটা খুব চেনা চেনা লেগেছে। তিনি আমার দুই বছরের সিনিয়র, হয়তো কোনদিন কোন আড্ডা বা গল্পে তাকে আমি দেখেও থাকতে পারি। মুশতাক আহমেদ বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ করেন। তার সম্বন্ধে পড়ে এইটুকু বুঝলাম তিনি জীবনে অনেক কিছুই করেছেন, বিদেশে পড়েছেন, চাকরি করেছেন, ব্যবসা করেছেন, ট্যুর গাইডও হয়েছেন। মৃত্যু এসে তাঁকে মুক্ত করে দিলো বন্দীদশা থেকে।
ব্লগ লেখার সময়ে লেখালেখি বন্ধের প্রতিবাদের Muzzle Me Not ট্যাগ লাইন চালু হয়েছিল। আমরা দিনের পরে দিন প্রোফাইলে এই ছবি রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু এমন শ্বাসরুদ্ধকর সময় আমি কখনও দেখি নি। ব্লগারেরা চুপচাপ, কেউ ভয়ে, কেউ আবার ব্যস্ত আছে প্রোফাইলে নিজেকে "প্রধানমন্ত্রীর মানুষ" বলতে।
দিনের শেষে সবাই ব্যস্ত যে যার ধান্ধাতে। আমিও ব্যতিক্রম নই। চৌর্যতন্ত্র কায়েম করতে গেলে যে কিছু মুখ বন্ধ করে রাখতেই হবে।