বার্ধক্যের সাথে আপনার নিজের বয়সের যোগসূত্র আছে কোথাও। সেদিন এক আড্ডায় বলে বসলাম...টাবলু ভাই, উনিতো ইয়াং লোক আমাদের কয়েক বছরের সিনিয়ার, বয়স মাত্র ৪৬। বন্ধুরাও সায় দিল তাতে। আমাদের বয়স যত বাড়ছে, তারুণ্যের সিলিং ততই বেড়ে যাচ্ছে। চল্লিশে এসে এখন মনে হয় ষাট পর্যন্ত মানুষ ছোকরা থেকে যায়। আর ত্রিশ বছর বেচে থাকলে হয়ত আশিকেও যুবক যুবক লাগবে। মনে মনে কেউ নিজেকে বুড়ো ভাবে না বোধহয়।
ক্লাসে টু'তে যখন শুনলাম সাত্তার স্যারের বয়েস ত্রিশ তখন রীতিমত বুড়ো লোক মনে হয়েছিল তাঁকে। এখন নিজের বয়স প্রতি বছর একটু একটু করে বাড়ছে, কমার নাম মাত্র নেই। বিশ বছর আগে যেসব মেয়েদের সাথে টাঙ্কি এবং ইয়ার্কির সম্পর্ক ছিল তারা সবাই বতর্মানে খালাম্মা বলে সম্বোধিত এবং জীবন নিয়ে দারুন ব্যস্ত, অনেকের টিনেজার সন্তানও আছে। আমরা ছেলেরাও পুত্র কন্যা নিয়ে ব্যস্ত; আমাদেরকেও আনায়াসে আঙ্কেল বলে ডাকে আজকের ২০/২২ বছরের ছেলেমেয়েরা। ঐ বয়েসী ভাগ্নে-ভাস্তে আমাদের সবারই আছে।
আমার আশি বছর বাঁচার কথা। এটা আমার হিসাব নয়, ছোটবেলায় একজন হাত দেখে বলেছিল। সে সময় এটাকে অনন্তকাল মনে হতো। এখনও যে খুব অল্প সময় মনে হয় তা না। আশি বছর বাঁচলে আমি অর্ধেক জীবন পাড়ি দিয়েছি। এইপথ পাড়ি দিতেই প্রচুর ঝামেলা হয়েছে, খুব মসৃণ ছিল এটা বলব না। ঠিক এর সমান আরও একটা পথ পাড়ি দিতে হবে, এটা ভাবলেই কেমন অলস অলস একটা ভাব হয়...একটু ছুটি নিতে ইচ্ছে করে জীবন থেকে। এগুলো সবই মধ্যবয়েসের ভাবনা - খুব কঠিন এই সময়, জীবনের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা দখল হয়ে যায় এ সময়ে। খালি মনে হয় পালাই-পালাই, স্কুল পালানোর যায় কিন্তু জীবন থেকে পালাবো কেমনে?
আমার যেদিন ত্রিশ বছর বয়েস হয়েছিল, সেদিন ভেবেছিলাম যে একটা মাইলস্টোন পাড়ি দিয়েছি। অথচ শরীরের কোথাও বিশ আর ত্রিশের পার্থক্য ছিল না। বিশ আর ত্রিশ দু'জনেই বেশ চটপটে জোয়ান ছোকরা। সে তুলনায় চল্লিশ অনেক গম্ভীর প্রকৃতির ভদ্রলোক, আজকে সকালে হাঁটুর ব্যথা নিয়ে উঠে তাই মনে হলো। চল্লিশ সাহেব চোখে চশমা রাখেন, শৈশবের হারানো মাঠের কথা ভাবেন, উনার তুলনায় ত্রিশ একদম চটুল যুবক, প্রায় বিশের মতই। তার মনে শৈশব নিয়ে আদ্যিখেতা নেই, আছে যৌবনের বেদনাগুলো। অথচ চল্লিশ ভাবছে - দিন চলে গেলো...
যেখানে দাঁড়িয়ে আছি আজ এখান থেকে শৈশবের কোলাহলগুলো ঠিক যতদূরে - বার্ধক্যের হাতছানিও ঠিক প্রায় একই দূরত্বে। অবধারিতভাবে আমি উন্মুখ তাকিয়ে রই শৈশবের দিকে, বার্ধ্যকের দিকে নয়। আর কতদিন পারবো কে জানে? তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাব সুনিশ্চিত।
No comments:
Post a Comment