প্রায়দিনই দরজার সামনে যীশুর আহবান রাখা থাকে। উনি সব সময়েই ইহকাল এবং পরকালের উন্নতি আর আলোর পথে আসার নানান সার্ভিস অফার করেন। ধর্মের সাথে বাজার ব্যবস্থা সম্পর্ক অনেক পুরানো। যীশুর সার্ভিস নিতে গেলেও পকেটের পয়সা খরচ হবে দেখে কোন দিন তার ডাকে সাড়া দেই নি। আজকে একটু ব্যতিক্রম দেখলাম। আজকে দরজার সামনের ফ্লায়ারে জেসাস গাছ কাটার জন্য ১৫% ছাড় দিয়েছেন। সত্যি কথা বলতে যীশুর অন্য কোন বাণীতে আমি এতোটা আপ্লুত হইনি। এইবার সত্যি সত্যি ওনাকে ফোন দিতে পারি। ইহকাল আর পরকাল ঠিক করার বহু বহু ব্যবস্থা থাকলে কম খরচে গাছ কাটার লোক পাওয়া কঠিন।
যীশু প্রসঙ্গে মনে পড়ল - বহুদিন আগে আমরা ৩ বন্ধু একই বাসায় থাকতাম। এর মধ্যে রুমি ছিল ধার্মিক। প্রায়ই রাতে সে ব্লকব্লাস্টার থেকে ধর্মীয় সিনেমা নিয়ে আসতো। নবী রসুলদের জীবনী নিয়ে করা। ইসলাম ধর্ম আর খৃষ্ট ধর্মের নবী রসুল প্রায় একই। সুতরাং মার্কিনি ধর্মীয় সিনেমা কার্যত আমাদের ধার্মিকদের জন্যেও প্রযোজ্য।
রাতে বাসায় ফিরে পানীয় পান করতে করতে আমরা রুমিকে জিজ্ঞেস করতাম - আজকে কোন নবী দোস্ত?
একদিন ইউসুফ নবীর সিনেমা দেখলাম। কাহিনি আমরা যা পড়েছি ঠিক সেই রকমই। সিনেমার শেষে ধর্মীয় গুরুগম্ভীর আলোচনাও হত। নিজে পান না করলেও আমাদের পানীয়তে রুমি বাঁধা দিতো না কদাচও।
রুমির কাছে শুনেছিলাম যে যীশু নাকি আবার ফিরে আসবেন। অস্থির এই পৃথিবীতে শান্তি আনার জন্য তিনি ফিরবেন সিরিয়াতে - দামেস্ক শহরে। ১৫ বছর আগে সিরিয়াতে যুদ্ধ শুরু হয় নি। মার্কিন দেশ মধ্যপ্রাচ্যের বারোটা বাজানোর জন্য ইরাক আর আফগানিস্তানে যুদ্ধ করছে। ইংরেজিতে যেটাকে বলে গাং-হো - জাতীয়তাবাদ ঠিক সেই পর্যায়ে আছে। ফ্রান্স আর জার্মানি ইরাক যুদ্ধের বিরোধীতা করাতে কংগ্রেস ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজের নাম পালটিয়ে ফ্রিডম ফ্রাইজ করে দিয়েছে। ফরাসী চুম্বন (ফ্রেঞ্চ কিস) বিষয়ে অবশ্য কবি নীরব। সেটার নাম পালটায় ফ্রিডম কিস করা হয় নাই। জাতীয়তাবাদের চেয়ে বিপদজ্জনক অসুখ এই পৃথিবীতে আর দু'টি নেই।
সিরিয়াতে যীশু ফিরবেন শুনে আমার একটু দুঃখ লাগলো। আমি রুমিকে বললাম - যীশুকে তো মার্কিন দেশ ভিসা দিতে চাবে না। যীশু দেখতেও মধ্যপ্রাচ্যীয় হবেন (আসল যীশুও তা-ই ছিলেন), তার কপালে বহু খারাপি আছে। সকাল বিকালে যীশুর নাম জপা লোকজনও তাকে সন্ত্রাসী বলে ডাকবে। তাছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যসহ বাকি পৃথিবীতে শান্তি আনতে গেলে তো গণতন্ত্র আর শান্তির সোল এজেন্ট মার্কিনিরা ক্ষেপে যাবে।
প্রশ্নটা অমীমাংসিত রেখেই সেই আলোচনা বন্ধ করতে হয়েছে।
১৬ বছর পরে এখনো আমি মাঝে মাঝে যীশুর পুনর্জন্ম নিয়ে ভাবি। সিরিয়ার অবস্থা আরো টাইট। এখন ওখানে ফিরলে তাকে শরনার্থী হয়ে ইউরোপেও যেতে হতে পারে। সেখানে অনেক যীশুভক্তের লাথি আর গুঁতো অপেক্ষা করছে তার জন্য। ঈশা নাম নিয়ে তিনি নানাবিধ সমস্যাতে থাকবেন। তার পুর্নজন্ম পূর্বের জন্মের চেয়ে সুখের হবে না। আর এই ফ্লায়ারটা যেই যীশু রেখেছে (মেক্সিকান কোম্পানি, এই সব সার্ভিস ওরাই দেয় মূলত - Jesus এর উচ্চারণ হওয়া উচিত হিসুস) সেই জেসাসরাও কম ঝক্কি পোহাচ্ছে না এই দেশে ঢুকতে। Jesus নাম মেক্সিকোতে বেশ পপুলার। আমরা যেমন মোহাম্মদ রাখি নামের সামনে। মার্কিনিরা যীশুকে ডাকলেও যীশুর নামের মানুষ খুব বেশি দেখি নি।
আমার কৃতকর্মের জন্য ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করে দিলেও দিতে পারেন। কিন্তু আমার উঠোনের বেয়াড়া হয়ে ওঠা গাছ উনি কাটবেন না এটা নিশ্চিত বলা যায়। অচিরেই গাছকর্তক যীশুকে ফোন দেব। নইলে দেখা যাবে এই যীশুও পলাতক।
No comments:
Post a Comment