Friday, July 23, 2021

শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ

 সিএনএনে এক পাকিস্তানি জেনারেলের সাক্ষাৎকার শুনেছিলাম। বিন লাদেনকে মারার পরপর। সেই লোক অভিযোগ করলেন যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ফাঁসানো (ফ্রেম) হয়েছে - বিন লাদেনকে নাকি মার্কিন দেশ অনেক আগেই হত্যা করেছিল, শুধু পাকিস্তান রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনীর বদনাম করার জন্য এই অভিযান করে বিন লাদেনকে হত্যার নাটক করা হয়েছে।

আমার কর্মক্ষেত্রেও কিছু পাকিস্তানি সহকর্মী আছেন। উনারা মাঝে মাঝে বলেন যে পাকিস্তানের অবস্থা নাকি খুবই ভালো - এই সব তালেবানি হামলা-টামলা সব মিডিয়ার সৃষ্টি। পাকিস্তান দ্রুত উন্নতির পথে। দুর্ভাগ্যক্রমে এই রকম এক আলাপচারিতার এক সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানের এক স্কুলে হামলা করে অনেক অনেক বাচ্চাকে মেরে ফেলল তালেবানরা। আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করি নি - করলে অনেক ইঙ্গ-মার্কিন বহুজাতিক ষড়যন্ত্রের গল্প শোনা যেত।
পাকিস্তানি সম্বন্ধে আমার দুটি অবজার্ভেশন আছে। প্রথমটা হচ্ছে যে কোন ব্যাপারে এরা মিথ্যা কথা বলতে পারে। শিক্ষিত লোক আরও বেশি পারে।
দ্বিতীয়টা হচ্ছে, সজ্জন, দুর্জন, ভদ্রলোক, অভদ্রলোক নানান রকম পাকিস্তানি আছে, থাকাই উচিৎ, একটা দেশে নানান ধরনের মানুষ থাকবে কিন্তু ১৯৭১ প্রশ্নে এরা সবাই একেক জন টিক্কা খান।
আজকে বাংলাদেশের জন্মদিন। এই দেশ ৪৫ বছরে পা দিয়েছে। আমার নিজের ৪৫ বছর হয়েছে কয়েকমাস আগে। আমি সহ আমার বেশিরভাগ বন্ধুবান্ধবই বাংলাদেশের সমবয়েসি। বাংলাদেশের শৈশবের গল্প আর আমাদের শৈশবের গল্প একই সময়কার।
সেই বিক্ষুব্ধ সময়ে বড় হতে হতে দেখেছি যে ইতিহাসের চাকা উলটো দিকে ঘুরানোর চেষ্টা হয়েছে। যেই প্রজন্মটার মুক্তিযুদ্ধকে সবচেয়ে বেশি করে ধারন করা উচিৎ ছিল সেটাই সবচেয়ে বেশি মগজ ধোলাই করা।
আমি বিস্মিত হই না যখন দেখি আমার অনেক বন্ধুর চিন্তাভাবনা কিছুটা আমার পাকিস্তানি সহকর্মীদের মতোই। ওনারা ডিফারেন্সিয়াল ইক্যুয়েশনের সমাধা করে ফেলতে পারেন নিমেষেই - কিন্তু সহজ সত্যটা অস্বীকার করতে পারেন অবলীলাতে। বাংলাদেশি মার্কিনিদের মধ্যে অনেকেই হিলারি বা বার্নি স্যান্ডার্সকে চান ক্ষমতাতে - কিন্তু নিজের দেশে হেফাজতে ইসলামকে দেখতে চান ক্ষমতায়। এ সবই আমাদের পাকিস্তান অভিমুখে যাত্রার ফলাফল।
কিন্তু আনন্দের বিষয় নতুন প্রজন্ম এই রকম নয়, এবং সর্বোপরি আমি এটা বিশ্বাস করি যে এটা পুরো বাংলাদেশের চিত্র নয়। মগজ ধোলাই সবচেয়ে হয়েছে শহুরে, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনিতে।
স্বাধীনতার সুফল আমরা সবাই পেয়েছি। আমরা যে পাকিস্তান নই এবং পাকিস্তানি নই - সম্ভবত এটা সবচেয়ে বড় সুফল। আমরা সন্ত্রাসের প্রস্তুতকারী নই, সন্ত্রাসের পরিবেশক নই, সন্ত্রাসের দোকানদার নই। আমাদের সমস্যা আছে, দুর্নীতি আছে, দুঃশাসন আছে, খুন আছে, ধর্ষণ আছে - আছে না পাওয়ার বেদনা। কিন্তু মার্কিন দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৬ কোটি মানুষকে খাইয়ে, পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে।
দিনের শেষে আমাদের নিজেদের একটা দেশ আছে, একটা পতাকা আছে, সমস্যা সমাধানের সম্ভবনা আছে। এই সম্ভবনাটাই আমাদের সাথে পাকিস্তানিদের পার্থক্য।
যেই বরাহশাবকটা পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে খেলার মাঠে লাফ-ঝাঁপ দেয় - সেও স্বাধীনতার সুফল পেয়েছে। যেই সব শিক্ষিত ছাগল ফেসবুকে আজগুবি জিনিস শেয়ার দেয় - তারাও পেয়েছে। যেই প্রবাসী "লিবারেল বাংলাদেশি" নিজ দেশে হেফাজতের নারী নীতির বাস্তবায়ন চায় সেও পেয়েছে।
শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ!!! শুভ জন্মদিন!!!
"তুমি আসবে ব'লে, হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।
তুমি আসবে ব'লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে ব'লে, বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভূর বাস্তুভিটার
ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।
তুমি আসবে ব'লে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।"

No comments: