Friday, December 25, 2020

আনুশার ১৫ বছরের জন্মদিনে

 আনুশার জন্ম নেওয়ার কথা ছিল মার্চ মাসের ৮ তারিখে। কিন্তু আমাদেরকে ৫ ই মার্চ ভোর রাতেই হাসপাতালে যেতে হল। আমরা অবশ্য প্রস্তুত ছিল। মানবশিশুর জন্মের প্রক্রিয়াটা সহজ নয়। বহু কষ্টের পরে আনুশা ভূমিষ্ঠ হল রাত ১২টা ৪৩ মিনিটে। ততক্ষণে মার্চ মাসের ছয় তারিখ শুরু হয়ে গেছে। আনুশার জন্মের পরের আমার আনন্দের পাশাপাশি বিশাল একটি অনুভূতি ছিল – বিস্ময়!!! এই ছোট বাচ্চাটা আমাদের!!! আমি বিস্ময় নিয়ে অনেকক্ষণ আনুশার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আনুশার সাথে সাথে আমিও জন্ম নিলাম পিতা হিসাবে। 

ছোট্ট আনুশা একবার "নো প্লেস ফর হেট" এর এম্বাসেডর হয়েছিল। ওর টিচার আমাকে জানিয়েছিলেন ক্লাসের যেসব বাচ্চাদের সাথে কেউ খেলতে চায় না, আনুশা তাদেরকে ডেকে খেলাতে নেয়। আমি আনন্দিত হয়েছিলাম কিন্তু ঠিক বিস্মিত হই নি, কেননা আনুশার পৃথিবীটা ম্যাজিকাল ছিল, সেখানে ঘৃণার অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু আমরা যেই পৃথিবীতে বাস করি সেটা মোটেও ম্যাজিকাল না, সবাইকে একদিন ধরাধমে নামতে হয়। আনুশাকেও জানতে হয়েছে যে এই পৃথিবীতে দুঃখ, শোক, বিষাদ সবই আছে। 

কিছুদিন আগে আনুশা জানালো সে বড়লোক হতে চায়। জেফ বেজোসের মতো বড়লোক। আমি কিছুটা দমে গেলাম। ছোট আনুশা চাইতো জেন গুডাল হতে। মিনমিন করে বেজোসের নামে কিছু বদনাম করলাম। তাতে খুব লাভ হল না। শেষ পর্যন্ত আমি বললাম, ঠিক আছে - বেজোসের মতো বড়লোক হলেও চলবে - এমাজন থেকে গুডালের তহবিলেও টাকা যায়। 

বড় হওয়ার মজাটাই এটা। নিজের মতো একটা জীবন যাপন করা যায়।

একেকটা ধাপ পেরিয়ে যাচ্ছে আনুশা, আর নিত্য নতুন একটা আনুশাকে আমি দেখছি। নিত্যনতুন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। 

ছোট্ট আনুশা জিজ্ঞেস করত – প্রজাপতি কি পাখি? 

মাঝারি আনুশা জিজ্ঞেস করত – পিটারপ্যান কি রিয়েল? 

একটু বড় আনুশা জিজ্ঞেস করে - কেন মানুষকে শরণার্থী হতে হয়? 

আনুশার বেড়ে উঠার সব ধাপেই আমি উপস্থিত আছি। ওর প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিন থেকে স্কুলের নাটকের অভিনয়ে - দায়িত্ব থেকে না, আনন্দ নিয়েই আমি থাকতে চাই ওর জীবনের প্রতিটি ধাপে। 

আজ আনুশার ১৫ বছর পূর্ণ হল। ঠিক ১৫ বছর আগের মার্চ মাসের ছয় তারিখ রাত ১২টা ৪৩ মিনিটে আমার যেই বিস্ময়টা হয়েছিল, ১৫ বছর পরেও সেটা একটুও ফিকে হয় নি। 

আমি এখনও আমার মেয়েটার মুখের দিকে সেই বিস্ময় নিয়েই তাকিয়ে থাকি। 

শুভ জন্মদিন আমার ছোট্ট পাখি। শুভ জন্মদিন।

No comments: