স্কুলে মারিয়ার নাম মিস টি। ভালো নামের অদ্যাক্ষর দিয়ে তৈরি মার্কিনি নাম। মার্কিনিরা সব কিছুই সংক্ষেপ করে ফেলে। মারিয়া যদি মিস টি হয়, তাহলে আমি অটোমেটিক্যালি মিস্টার টি হয়ে যাই। আমার নামের অদ্যাক্ষর নিলেও একই ব্যাপার। মিস্টার টি বিখ্যাত চরিত্র, যারা জানেন না তারা Mr. T লিখে গুগল করতে পারেন। স্কুলে মিস টি গম্ভীর হয়ে থাকে সাধারণত। আমি একদিন বাচ্চাদের স্কুলে গিয়ে দেখলাম বাচ্চারা লাইন ধরে কোথায় যেন যেন যাচ্ছে আর লাইনের শুরুতে মারিয়া চশমা পরে গম্ভীরভাবে সব ঠিক আছে কিনা চেক করছে। প্রতিটি বাচ্চা "হাই মিস টি" বলে সম্ভাষণ জানাচ্ছে। লাইনের পেছনে পেছনে আমি গিয়ে - "হাই মিস টি" বলাতে মারিয়া একই সঙ্গে চমকিত এবং বিরক্ত হল। বোঝা গেল চার্চ আর স্টেট সেপারেশনের মতো সেও কাজ আর বাসার বিভাজনে বিশ্বাস করে। আমার ক্ষেত্রে উল্টোটা, আমি বাসায় বসেই অফিস করি।
মিস টি এর সাথে আমার যুগল জীবনের ১৫ বছর পূর্তি হল। আমাদের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে আমাদের দুটো বাচ্চা ছিল। সেই হিসাবে আজকে ১৪ টি বাচ্চা থাকার কথা। কিন্তু এখনও সেই দুটোই বাচ্চা। বলা যায় মিস টি, আনুশা, সামারা আর আমি - আমরা সবাই একই সাথে বেড়ে উঠছি সংসার নামের এই অদ্ভুত আয়োজনে। বলাই বাহুল্য মিস টি আর আমার মধ্যে যত না মিল আছে তারচেয়ে অমিল অনেক বেশি। জীবন দর্শন থেকে শুরু করে বালিশের সাইজ বা চশমার পাওয়ার - সর্বত্রই ১৮০ ডিগ্রি পার্থক্য। যে কোন ঘটনা বা সমস্যা আমরা প্রায়ই সম্পূর্ণ বিপরীতভাবে চিন্তা করি - সত্যি কথা বলতে এতে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি, কেননা দু'জনে মিলে আমরা ঘটনার পুরোটাই দেখতে পাই।
আমরা ১৫ বছর ধরে জাগতিক সব কিছুই ভাগ করে নিচ্ছি। ভাগ করে নিচ্ছি মাথার উপরের ছাদ, ডেকচিতে রাখা খাবার, কলের পানি, বিছানার কম্বল, টেলিভিশনের রিমোট, আনন্দ, বেদনা, হাহাকার - প্রায় একই জীবন কিন্তু দু'টো আলাদা মানুষ। একই রৌদ্রলোকে পুড়ে যাওয়া অথবা একই বর্ষণে সিক্ত হওয়াটাই মনে হয় সংসার। দিনের পর দিন আনন্দ, বিষাদ অথবা মাঝরাতে কম্বলের বা টিভির রিমোটের অধিকার নিয়ে টানাটানি করাটা আসলে এক আশ্চর্য যাত্রা। আমরা দুটো মানুষ সংসার নামের অলীক সেই ট্রেনের যাত্রী - যা কোনদিনই কোনও সুখ নামক গন্তব্যে পৌঁছাবে না - কেননা এই যুগল যাত্রাটাই সম্ভবত সুখের আসল সংজ্ঞা।
আরো কিছুকাল সেই যাত্রায় প্রত্যাশায়।
শুভ ১৫!!!
No comments:
Post a Comment