আমি ব্রাজিলের সাপোর্টার ছিলাম। ব্রাজিলের খেলা হইলে টেনশন লাগতো। বয়েস বাড়ার সাথে সাথে টেনশন চলে গেছে। নেইমারের গড়াগড়ি দেখে বিরক্ত লাগে, ব্রাজিল গোল খাইলে আনন্দে লাফ দিয়ে উঠি মাঝেমাঝে (এই আনন্দ গত বিশ্বকাপে ব্রাজিল কম দেয় নাই)।
সাপোর্টার হিসাবে সম্ভবত আমি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মতো হয়ে গেছি। আজকাল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দল সাপোর্ট করি। শুধু তাই না - সেই দিন পতুর্গাল গোল দেওয়ার পরে পতুর্গালের সাপোর্টার হয়ে গেলাম, স্পেন শোধ করার পরে স্পেনের - রোনালদো কটমট করে নেটের দিকে তাকায়ে ফ্রি কিকে গোল দেওয়ার পরে আবারও পতুর্গাল...একই খেলাতে এক হাফে একদল আর অন্য হাফে অন্য দল সাপোর্ট করে ব্যারিস্টার মওদুদের উচ্চতায় উঠে গেছি লাফে।
আজকে অনেকদিন পরে মেক্সিকোর খেলা দেখতে গিয়ে পুরা টেনশনে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো হয়ে গেছে। আজকে আর মওদুদ আহমেদের মতো হইতে পারি নাই। টেক্সাসে বাস করলে মেক্সিকো প্রায় নিজের দেশের মতো। আমি গুনে দেখলাম - আমার আর মারিয়ার সহকর্মী, পাড়া প্রতিবেশি, প্রিয় রেঁস্তোরা বা অফিসের ক্যাফে, ডাক্তার, বাসার হ্যান্ডিম্যান, ঘাস কাটার লোক, ক্লিনার, মেয়েদের বান্ধবী বা স্কুলের টিচার - সব মিলায়ে আমাদের পরিচিত লোকের অর্ধেকের বেশি মেক্সিক্যান বংশোদ্ভূত।
কিছুদিন ধরে কার্ল স্যাগানের প্রবন্ধ সংকলন - বিলিয়নস এন্ড বিলিয়নস পড়ছি। একটা প্রবন্ধের নাম হচ্ছে মানডে নাইট হান্টারস। মানুষ আসলে প্রকৃতিগতভাবেই "হান্টারস আর গেদারার" - খেলাধূলা সম্ভবত সেই শিকারি প্রবৃত্তির ভদ্র ও সভ্য (সব সময় না যদিও) বহিঃপ্রকাশ। খেলা দেখতে বসলে নিজের অজান্তেই আমরা কোন একটা দলকে সাপোর্ট করা শুরু করি।
"Suppose you’re idly flipping the dial on your television set, and you come upon some competition in which you have no particular emotional investment—say, off-season volleyball between Myanmar and Thailand. How do you decide which team to root for? But wait a minute: Why root for either? Why not just enjoy the game? Most of us have trouble with this detached posture. We want to take part in the contest, to feel ourselves a member of a team. The feeling simply sweeps us away...
...We want to be swept up into something like a small, safe, successful war."
মানুষ গোষ্ঠিবদ্ধ প্রাণী এবং মানুষ শিকারি প্রাণী - সব মিলিয়ে দলবদ্ধ শিকার তাই আমাদের কাছে এতো উপভোগ্য - নিজের লিভিং রুমের আরামে বসে মেক্সিকোর খেলা দেখতে গিয়ে আমি সেই হারানো উত্তেজনার সন্ধান পেলাম। মেক্সিকোর জার্মানিকে "হোতায়ে" ফেলানোর আনন্দ সম্ভবত ভেতরে লুকিয়ে থাকা শিকার থেকে ফেরা সুপ্রাচীন এক মানুষের আনন্দ।
যাই হোক - বাকি বিশ্বকাপে আর মওদুদ আহমদ হব না ঠিক করেছি। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি - এইসব এলিটদের বাইরে গিয়ে আন্ডারডগ কাউকে সাপোর্ট দিব। মেক্সিকো আমার জন্য ভালো চয়েজ। আমরা বৃহত্তর মেক্সিকোতেই থাকি।
আন্ডারডগরা সাধারণত হৃদয় আর মন জয় করে নেয় - কাপ নিয়ে নেয় অন্য লোকে। এই বিশ্বকাপে আর কাপ থালা বাটি কিছু জুটবে না নিশ্চিত - হৃদয় নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
মন্তব্যে একটা লিঙ্ক দিচ্ছি - সেখানে গেলে কার্ল স্যাগানের প্রবন্ধটা পড়া যাবে। পুরোটা পড়লে বুঝা যাবে প্রাচীন মানুষের সাথে আমাদের যোগাযোগ ক্ষীণ হয় নি মোটেও - সত্যি কথা বলতে কী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদও একজন প্রাচীন চরিত্র।
"Initially, our loyalties may oscillate, first urging on one team and then the other. Sometimes we root for the underdog. Other times, shamefully, we even switch our allegiance from loser to winner as the outcome becomes clear. (When there is a succession of losing seasons, fan loyalties tend to drift elsewhere,) What we are looking for is victory without effort."
হিংস্রতা, ভালোবাসা, ক্রোধ বা প্রেম কোন কিছুই প্রকৃতি বিরুদ্ধ নয় - এইটুকু মনে রাখলে রাতের সুনিদ্রা পেতে অসুবিধে হবে না।
No comments:
Post a Comment