তৌফিক আমেরিকাতে যাওয়ার দিন ওর বাসার সামনে তোলা। ১৯৮৯ সালের অগাস্ট মাসে। আমার ডান পাশে দাঁড়ানো মিঠু এখন পরলোকে - দেখতে দেখতে মনে হয় দুই বছরের বেশি হয়ে গেল। ১৯৯২/৯৩ সালের পরে ওকে আর দেখি নি, সুতরাং ওর এই চেহারাটাই আমার মনে থাকবে আজীবন, আমরা বুড়ো হয়ে যাবো তবু মিঠু আটকে থাকবে ২২ শে - ম্যাজিকালি।
তৌফিকদের এই বাসাটার ঠিকানা আমার এখনো মনে আছে, ধানমন্ডি ২৬ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাসা। সামনে সাজানো বাগান, পেছনে অনেকখানি জায়গা। অনেকটা যেন মফঃস্বল শহরের রেস্ট হাউজ রেস্ট হাউজ ভাব।
জনপ্রিয় টিভি নাটক একান্নবর্তীতে এই ঠিকানাটা ব্যবহার করা হয়েছিল, নাটকটা দেখতে গিয়ে চমকে উঠেছিলাম, কিন্তু বাসাটা দেখায় নি। তৌফিকরাও ওই বাসা ছেড়ে চলে গেছে অনেক বছর আগে। এখন সম্ভবত ভেঙ্গে টেঙ্গে ফ্ল্যাট বানায়ে ফেলা হয়েছে। গত ২৫ বছরে ঢাকা শহরের যা পরিবর্তন হয়েছে সেটা প্রায় অভাবনীয়। ভালো এবং খারাপ সব দিকেই।
অথচ এক শীতকালে সন্ধ্যাতে আমরা ভূতের তাড়া খেয়ে ধানমন্ডি লেকের পাড় থেকে বেন জনসনের গতিতে দৌড় মেরেছিলাম। বর্তমানের ঢাকা শহর থেকে মানুষের তাড়া খেয়ে ভূতরা সব বিতাড়িত, এই ঠেলা চললে কিছুদিন পরে ভূতদের মতো হয়তো ভবিষ্যতও বিদায় নিবে এই শহর থেকে।
লেকের পাড়ে আগে প্রায়ই ঢোঁড়া সাপ দেখা যেত। ওদের দেখলেই আমি শিউরে উঠতাম। ওরাও অদৃশ্য - কিন্তু কয়েক বছর আগে লেকের পাড়ে গিজগিজ করা মানুষের ভিড়ে হঠাৎ আমি আধমরা একটা সাপ দেখে ভয়ের বদলে আনমনা হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল পুরানো বন্ধুর সাথে অনেকদিন পরে দেখা হয়েছে।
ঢাকাতে গেলে আমার প্রিয় জায়গাগুলো থেকে দূরে থাকতে চাই - আমার স্মৃতির শহরের সাথে কিছুতেই মেলানো যায় না, তবু কিছু কিছু শব্দ, গন্ধ, ছবি ঠিকঠাক ডেকে আনে অক্ষয় বালকবেলা...মনে হয় যেন সবকিছু রয়ে গেছে আজও চমৎকার...
No comments:
Post a Comment