অফিসে শেষবার গিয়েছিলাম মার্চ মাসের ১১ তারিখে। এরপরে ৩০০ দিন কেটে গেছে। অফিসে যাই নি। অফিসটা যে আমার খুব প্রিয় জায়গা সেটা বলবো না, কিন্তু এই ৩০০ দিন শেষে নিজের পুরনো জীবনটাই মিস করি, যতই শাপশাপান্ত করি না কেন, পুরনো জীবনটাকে ১০ এর মধ্যে ৬ দিলেও সেটা এই গৃহবন্দীকালের চেয়ে অনেক শ্রেয়।
মার্চের ১৫/১৬ তারিখ অফিস থেকে পুরোপুরি বাসায় বসে কাজ করতে বলা হয়েছিল। আমার কয়েকটা বই আনার দরকার ছিল অফিস রুম থেকে। আমেরিকার খুব অল্প কিছু অফিসে এখনও রুম আছে, আমাদের অফিস সেই দুর্লভ জায়গা, রুমের দরজা আটকিয়ে নিজেছে বিচ্ছিন্ন করা যায় সেখানে এখনো। অফিসটা একটু পরিস্কার করে আসতে পারলে ভালো ছিল, সম্ভবত কয়েকটা ফল রাখা ছিল টেবিলের পাশে।
আমি ম্যানেজারকে বলেছিলাম অফিসে ঢোকা যাবে কিনা। জানা গেল যে মার্চে লকডাউনের পরে কেউ কেউ না বলে অফিসে ঢুকেছে। ফলশ্রুতিতে সবার ব্যাজ এক্সেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ঢুকতে গেলে টাইম স্লট নিতে হবে ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে, এরপরে অন্য এক বিল্ডিং এ গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা রেকর্ড করিয়ে সাময়িক ব্যাজ নিয়ে অফিসে যেতে হবে। এতো যন্ত্রণা নিতে ইচ্ছে ছিল না, তাই আর চেষ্টা করিনি। কিন্তু দীর্ঘ বিরতির পরে এক দেড় বছর লক করা রুমে গেলে প্রথম দিনটা যাবে মনে হয় সেটা পরিস্কার করতে।
যাই হোক ম্যানেজমেন্ট থেকে বলা হয়েছে এই বছরের জুন মাস পর্যন্ত সম্ভবত বাসা থেকেই কাজ চলবে। এই অতিমারী অতীত হলেও বাসা থেকে কাজ সম্ভবত স্থায়ী একটা রূপ পাবে। সপ্তাহে একদিন বা দুই দিন অফিসে গেলেই চলবে। আমি অবশ্য আগে ২০ ঘন্টা বাসা থেকে কাজ করতাম। কিন্তু বর্তমানে ৪০ ঘন্টার কাজ বেড়ে ৬০ ঘন্টাও হয়ে যায়। গভীর রাতে বা উইকেন্ডেও লোকজন কাজ করছে। অতিমারী এসে বাসা আর কাজের যেই পার্থক্য থাকা দরকার ছিল সেইটা ঘুচিয়ে দিয়েছে।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হলে করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন নেওয়া ছাড়া আর উপায় নাই। আমেরিকার যেই অবস্থা তাতে লকডাউন বা অন্য কিছু আর কাজ করবে না। ভ্যাক্সিনের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি। আমার প্রাইমারি ডাক্তার অস্টিন রিজিওনাল ক্লিনিকে যুক্ত। এই ক্লিনিক অস্টিনের সর্ববৃহৎ ক্লিনিকগুলোর একটি। আমি টিকার জন্য যোগাযোগ করেছিলাম। শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার কারণে আমার ফেইজ ১বিতে টিকা পাওয়ার কথা। বর্তমান ফেইজ ১এ হচ্ছে ফ্রন্ট লাইনের কর্মীদের জন্য। অস্টিন রিজিওনাল ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী ফেইজ ১এ এবং ১বি মিলিয়ে ওদের লিস্টে ৫০ হাজার মানুষ আছে। এর বিপরীতে ওদের কাছে টিকা আছে সাত হাজার। সুতরাং টিকাও খুব দ্রুত পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
মারিয়ার কাজ স্কুলে, ওকে প্রতিদিনই স্কুলে যেতে হয়। স্কুলের শিক্ষক বা স্টাফদের ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কার হিসাবে ধরা হয়নি এখনও, যদিও স্কুলগুলো চাইছে দ্রুত টিকার আওতাতে আনার জন্য। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে মারিয়াও হয়ত টিকা পেয়ে যাবে স্কুলের মাধ্যমে। আমাদের বাল্যকালে টিকাওয়ালিরা ঘরে ঘরে গিয়ে টিকা দিতো - এদের দেখলে আতংকে কাঠ হয়ে যেতাম আমরা। কে জানতো এই জীবনে টিকা পাওয়ার জন্যই এই রকম হাপিত্যেশ করতে বসে থাকবে হবে? টিকাওয়ালিরা আমাদের পেছনে নয়, আমাদেরকেই ছুটতে হবে ওদের পেছনে?
No comments:
Post a Comment